-->

অভিজিৎ সেনের ছোটগল্পে নীচুতলার মানুষের জীবন বৃত্তান্ত - ড. চঞ্চলকুমার মণ্ডল

 

অভিজিৎ সেনের ছোটগল্পে নীচুতলার মানুষের জীবন বৃত্তান্ত - ড. চঞ্চলকুমার মণ্ডল

বাংলা সাহিত্যের আদি রূপ সেই চর্যাপদের মধ্যেই আমরা সর্বপ্রথম নিম্নবর্গীয় জনজীবনের প্রতিচ্ছবি পেয়ে থাকি। চর্যাপদের আবিষ্কারক মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় যে ২৩ জন পদকর্তার পরিচয় দিয়েছেন; তাঁদের প্রায় সকলেই ডোম, শবর, সাঁওতাল, শুঁড়ি, চণ্ডাল, তাঁতি প্রভৃতি সমাজের একেবারে অপাংক্তেয় নীচুতলাকার নর-নারীর জীবন জীবিকার চিত্র এঁকেছেন। অথচ এঁরা সকলেই বৌদ্ধ সহজিয়া সাধন ধর্মে দীক্ষিত। সুতরাং চর্যার পদ রচয়িতাদের প্রধান অবলম্বন ছিল বৌদ্ধ ধর্ম। সেই ধর্মীয় সাধন তত্ত্বকে ছাপিয়ে গিয়ে সমাজের নীচুতলাকার নর-নারীর জীবন-জীবিকার প্রতিচ্ছবি ধরা পড়ে। শিকার করা (৬, ২৩ নং পদে), গাছ কেটে কাঠের কাজ করা (৫, ৪৫ নং পদে), তাঁত বোনা, চাঙাড়ি তৈরি করা (১০ নং পদ), খেয়া পারাপার করা (১৪ নং পদে), তুলোধোনা ও কাপড় বোনা (২৫ ও ২৬ নং পদে) প্রভৃতি অসংখ্য পদে এমন বিচিত্রপূর্ণ নীচুতলার মানুষের জীবন জীবিকার চিত্র অতি সজীব রূপে ফুটে উঠেছে। ক্রমে সাহিত্য সংস্কৃতির উত্তরোত্তর চর্চা বৃদ্ধির ফলে, নিম্নবর্গীয় মানুষের জীবন ছবি ক্রমে আরো প্রতিফলিত হতে শুরু করলো। মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ সাহিত্য, বৈষ্ণব সাহিত্য, লোকগাথা-গীতিকা জুড়ে নীচুতলার নর-নারীর সংগ্রাম-সংক্ষুব্ধ জীবন ছবির মধ্য দিয়ে নিম্নবর্গীয় জনজীবনের সামাজিক চেহারাটা আরো প্রকট রূপে ধরা পড়েছে।

       ক্রমে আধুনিক যুগের দ্বার প্রান্তে এসে আমরা দেখালাম নীচুতলার মানুষের সংগ্রামী জীবনে তাদের শোষিত হওয়ার নক্কর জনক সব চিত্র। ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার সম্পাদক (১৮২০-১৮৮৬) অক্ষয়কুমার দত্ত মহাশয় গ্রাম বাংলার কৃষক কুলের সেই শোষণের ছবি তুলে ধরলেন শিক্ষিত বাঙালী মানসের কাছে। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বঙ্গদেশে কৃষক’ প্রবন্ধেও উঠে এল পল্লীগ্রামের শোষিত , অত্যাচারিত কৃষক কুলের জঠর যুদ্ধের ছবি। এভাবে, প্রবন্ধ থেকে শুরু করে মধুসূদন দত্তের ‘নীল দর্পণ’ (১৮৬০) নাটকেও রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’তে কৃষক এবং শ্রমিক খোদাই কারীর সংগ্রামী জীবন ছবি উঠে এসেছে। রবীন্দ্রনাথের ‘শাস্তি’ গল্পে পদ্মার তীরবর্তী কৃষক জীবনের ছবি ধরা পড়ে। শরৎচন্দ্রের ‘মহেশ’ গল্পে ধরা পড়ে কৃষক জীবনের শোষণ চিত্র। ফলে কৃষক জীবন থেকে শ্রমিক জীবনে রূপান্তরের ছবি এই গল্পে উঠে এসেছে। এভাবে, তিন বন্দ্যোপাধ্যায় তথা, তারাশঙ্কর, মানিক ও বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখনীতে নীচু তলার মানুষের জীবন বৃত্তান্তই বেশি করে প্রাধান্য পেল। সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ঢোঁড়াই চরিত মানস’ থেকে শুরু করে গুণময় মান্নার ‘লখিন্দর দিগার’, আবার, অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সহ সমরেশ বসুর ‘গঙ্গা’, অমিয়ভূষণ মজুমদারের ‘গড়শ্রীখণ্ড’, সুবোধ ঘোষের ‘শতকিয়া’, সহ নীচু তলার মানুষের জীবন ছবিকে আশ্রয় করে অসংখ্য কথাশিল্পী তাঁদের দরদী লেখনী নিয়ে এগিয়ে এলেন বাংলা সাহিত্য ধারায়। সেখানে, বনফুল থেকে শুরু করে রমাপদ চৌধুরী, কমলকুমার মজুমদার, মহাশ্বেতা দেবী, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, ভগীরথ মিশ্র প্রভৃতি এক ঝাঁক কথাশিল্পী নীচুতলার মানুষের জীবনবৃত্তান্তকেই তাঁদের শিল্প কলার মুখ্য উপজীব্য করে তুললেন। এমনকি নীচুতলার মানুষের অন্তর বেদনাকে আপন জীবন অভিজ্ঞতা বলে ফুটিয়ে তুলতে এগিয়ে এলেন ঐ নিম্নবৃত্তিয় দলিত জনজীবনের যোদ্ধা হিসেবে, ঐ নীচুতলারই শ্রেণি সংগ্রামের প্রতিনিধি হিসাবে জন্মসূত্রে দলিত জাতিরই, নিম্নকুলোদ্ভব কথাশিল্পী অনিল ঘড়াই। একিই ভাবে, মনোরঞ্জন ব্যাপারীর ‘চণ্ডাল জীবন’। সারণ কুমার মাত্র বারো বৎসর বয়সে লেখেন ‘বেজন্মা’ উপন্যাস। সবই নীচুতলার মানুষের আত্ম জাগরণ, আত্ম উন্মোচন। এই নীচুতলার মানুষেরাই ‘সভ্যতার পিলসুজ’এরাই সভ্যতার মেরুদণ্ড। কিন্তু, দুর্ভাগ্য এই শ্রেণির প্রকৃত কোন ইতিহাস নেই। সমাজের নীচু তলায় পড়ে পড়ে মার খাওয়া, বঞ্চিত, শোষিত নর-নারীর জীবন ইতিহাস নিয়ে, এদের উত্থানের সংগ্রাম প্রচেষ্টা নিয়ে ইতিহাস রচিত হয়নি বললেই চলে। নীচুতলার মানুষের উত্থান কল্পে যাঁরা এগিয়ে এসেছিলেন, সেই মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলে, মহীয়সী নারী সাবিত্রী বাঈ ফুলে থেকে শুরু করে, বিদ্যাসাগরের সমকালে নীচুতলার নর-নারীর মধ্যে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে দিয়ে তাদের আত্ম জাগরণের লক্ষ্যে আত্ম নিয়োজিত হয়েছিলেন গুরু চাঁদ ঠাকুর। কিন্তু, দুর্ভাগ্য এই সব মানব দরদীদের কথা ইতিহাসে সেভাবে উঠে আসেনি। একারণেই বোধ হয় সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাঙালীর প্রকৃত ইতিহাসের সংকট বিষয়ে আক্ষেপ করে ছিলেন। আসলে, পৃথিবীর যেকোন মানব জাতির ইতিহাসের আলোকেই তাদের অতীত জীবনের সমাজ-সংস্কৃতি ও বাস্তব জীবনের সমস্যা-সংকটের মূল কারণ বা উৎস ধরা পড়ে। জাতির নানান অজানা দিকগুলো ভাবী প্রজন্মের কাছে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে, ঐ জাতিকে আগামী সভ্যতার পথে ক্রমঃগ্রসরতায় মাইল ফলক হয়ে ওঠে। কিন্তু, দুর্ভাগ্য উচ্চ বর্ণের ইতিহাসকেই আমাদের জাতীয় জীবনের মূল ইতিহাস বলেই সাদরে গ্রহণ করেছি। উচ্চবৃত্তিয় মানব সমাজের পাশাপাশি যে, নিচুতলার মানুষেরও যে একটা সমাজ ইতিহাস থাকতে পারে, তা সরাসরি অস্বীকার না করলেও সহজেই আমরা এতদিন এড়িয়ে থাকতে পেরেছি। তাই, শুধু সাহিত্য সম্রাটের কেন, সর্বকালের সাহিত্য সমালোচক-রসজ্ঞদের চিরন্তন আক্ষেপ ধ্বনি-প্রতিধ্বনি হয়ে উঠেছে এই যে –

“শুধু আগে যেখানে ঠাকুর দেবতা ও রাজা রাজড়ার লীলাকেই ইতিহাসের মূল বিষয় বস্তু বলে মনে করা হত,  এখন তারই বদলে ইতিহাসের পাতা জুড়ে বসল ইংরেজের মাহাত্ম্য ও ইংরেজ শাসিত সমাজে যাদের টাকা-জমি-জাত পেশা বা চাকরির জোর বেশি তাদেরই মাহাত্ম্য। এই মুষ্টিমেয়র ইতিহাসকেই চালানো হল এবং এখনও চালানো হচ্ছে ভারতবর্ষের ইতিহাস বলে।”

এই ইতিহাসকে পিছনে ফেলে, নীচুতলার মানুষের জীবন বৃত্তান্তই পরবর্তী কালের সাহিত্যিকদের লেখনীর মূল বিষয় বস্তু হয়ে উঠল। নিম্নবৃত্তিয় নর-নারীর শোষণ-বঞ্চনার মুক্তির লক্ষ্যে ঐ শ্রেণির মানুষের সুখ-দুঃখ, আশা-নৈরাশ্য, তাদের জঠর লড়াইয়ের নিদারুণ ইতিহাস তুলে ধরার সংকল্পে দক্ষিণবঙ্গ থেকে শুরু করে একেবারে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত বহু জীবন দরদী কথক শিল্পী বাংলা সাহিত্যে লেখনী ধরলেন। সেই সকল জীবন সংবেদী, শোষিত মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামের জীবনেতিহাস নিয়ে উক্ত যে সকল কথাশিল্পী এগিয়ে এলেন: তাঁদের মধ্যে উত্তরবঙ্গের ঐ নীচুতলার সংগ্রামী জনজীবনের রূপকার হিসেবে অভিজিৎ সেনের নাম সাহিত্যের পাতায় আজ স্বর্ণাক্ষরে চিহ্নিত হয়ে গেছে।

       অভিজিৎ সেন পূর্ববঙ্গ তথা, বাংলাদেশের বরিশাল জেলার কেওড়াগ্রামে (১৯৪৫ সালের ২৮ শে জানুয়ারী) জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রাম, ক্রমে পুরুলিয়া হয়ে পড়াশোনা শেষ করার পূর্বেই তাঁকে কলকাতার একটি জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চাকরিতে যোগ দিতে হয়। দীর্ঘ ছয়-বছর যাবৎ তিনি (১৯৬৩-৬৯) ঐ বীমা কোম্পানিতে চাকরি করার পর, হঠাৎ মনে আকাঙ্ক্ষা জন্মাল নক্‌শাল আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত করা। কিন্তু, সেই আবেগ বেশি দিন টেকেনি। একসময় তিনি ঐ রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলে উত্তরবঙ্গের বালুরঘাটের একটি গ্রামীণ সমবায় ব্যাঙ্কে যোগদান করেন। ঐ সময় কথা শিল্পী ঐ উত্তরবঙ্গেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। এই সমবায় ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার কর্ম জীবনে তাঁর কেটে যায় দীর্ঘ ৩৪ বছর। ফলে, এই কর্মসূত্রে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। দীর্ঘ ৩৪ বছরের কর্মজীবনে উত্তরবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদ, ও দুই দিনাজপুর সহ অসংখ্য জেলায় চষে বেড়ানোর সুবাদে ঐ, উত্তরবঙ্গের জনজীবন সম্পর্কে কথাশিল্পীর ব্যাপক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে।

       জীবিকার সূত্র ধরে উত্তরদিনাজপুর জেলার গ্রাম জীবনের আর্থিক সমস্যা-সংকট সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতার সঞ্চয় ঘটেছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথাশিল্পী অভিজিৎ সেনের গভীর যোগের কারণেই তাঁর শিল্প সৃষ্টির মূল বিষয় হয়ে উঠেছে নীচু তলার মানুষের জীবন বৃত্তান্ত। যে সব মানুষের বিচিত্র পেশা, বিচিত্র সব আচার-বিশ্বাস সেই সব মানব জীবনের জঠর লড়াইয়ের জীবনেতিহাস; তাদের সমস্যা সংকটকে অভিজিৎ সেন শিল্পীর তুলি দিয়ে আঁকতে শুরু করলেন। কথাশিল্পী অভিজিৎ সেন স্বয়ং তাঁর ‘পঞ্চাশটি গল্প’ সংকলনের ভূমিকায় এমনই কথা উল্লেখ করে লিখেছেন –

“বিচিত্র বিশ্বাস, বিচিত্র আচার-বিচারে আবদ্ধ নানা অপরিচিত পেশার মানুষ। এই সব গল্পের অধিকাংশের বয়ান সাহিত্যের অঙ্গনে ইতি পূর্বে অপরিচিত সেই সব মানুষকে নিয়েই।”

       অভিজিৎ সেন যখন নীচুতলার মানুষকে তাঁর লেখনীতে তুলে ধরার চেষ্টা করেন, তখন গ্রাম জীবনের অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যাপক রদবদল হতে শুরু করে। কৃষি জীবীদের আর্থিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গড়ে ওঠে শ্রমিক আন্দোলন। মজুর, গ্রামীণ কারিগর, মৎস্যজীবী, ভূমিহীন কৃষক, ভাগ চাষি সহ অসংখ্য নীচুতলাকার আর্থিক সংকটগ্রস্ত মানুষের ম্লান মুখগুলি অভিজিৎ সেনের গল্প বিশ্বে লক্ষ্য করার মতো। উত্তরবঙ্গের গ্রামজীবনের নীচুতলার নর-নারীও নদী-গিরিখাত তাঁর গল্পভাষ্যে অতি সজীব রূপে ফুটে উঠেছে। উত্তরবঙ্গের টাউন, চিরি, নাগর, ব্রাহ্মণী সহ অসংখ্য নদী গিরিখাতও এই পরিবেশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা নিম্ন-বৃত্তীয় নর-নারীর আর্থিক জীবন সমস্যা-সংকটই অভিজিৎ সেনের গল্প শিল্পের মূল বিষয় ‘মৌরসী পাট্টা’, ‘ব্যবচ্ছেদ’, ‘আইন-শৃঙ্খলা’, ‘বর্গক্ষেত্র’, ‘বিষ’, ‘ঈশানীমেঘ’, ‘মাটির বাড়ি’, ‘ক্ষেত্রপাল’, ‘কলাপাতা’, ‘দেবাংশী’, ‘বখিলা’, ‘নদীর মধ্যে শহর’ প্রভৃতি গল্পের ভেতর দিয়ে নীচুতলার মানুষের চালচিত্র অতিনগ্ন বাস্তবের অনুষঙ্গে ফুটে উঠেছে। সেই সব নীচুতলার মানুষের জীবনবৃত্ত হিসেবে সাঁওতাল, ওরাঁও, কোচ, টোটো, রাজবংশী, যাযাবর, বাজীকর থেকে শুরু করে হিন্দু সমাজের নানান জাতিগত স্তর ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সামাজিক সমস্যা ও আর্থিক সংকটগত দিক ও ঐ সব অসংখ্য নীচুতলার নর-নারীর যাপন পদ্ধতির চালচিত্র নির্মিত হয়েছে। ‘স্কিংক্‌স’ (১৯৯৩) গল্পের মধ্যে নিম্ন-বৃত্তীয় নারীর উদ্‌গ্র যৌনাকাঙ্ক্ষার ছবি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বেদিনী’ গল্পের বেদে রমণীর জীবন ছবিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তেমনি, আবার অভিজিৎ সেনের ‘দেবাংশী’ গল্পের সারবান লোহার দেবাংশীতে পরিণত হওয়ার কাহিনী গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘দেবী’ গল্পের জীবন ভাষ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। মাত্র পাঁচশত টাকার বিনিময়ে সারবান লোহারকে গুনমানখেরা রঘুনাথ মণ্ডলের কাছ থেকে কিনে নেয়। তারপর থেকে কাকতালীয় ভাবে সারবান লোহার সত্যিকারের দেবাংশী হয়ে ওঠে যুক্তিহীন, সংস্কার নির্ভর, দৈবভীতু নিম্ন-বৃত্তীয় নর-নারীদের চোখেনানান প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রকৃতির কোলে বাস করে, প্রকৃতি নির্ভর নর-নারীদের চির অসহায়তার ছবি অভিজিৎ সেনের দরদী লেখনীতে অতি সজীব রূপে ফুটে উঠেছে। ‘ঈশানী মেঘ’ সেই রূপ একটি নীচুতলার নর-নারীর প্রকৃতির কোলে দৈব বিশ্বাসের মতো চির অসহায় হয়ে ওঠার বাস্তবানুগ গল্প চিত্র।

       নিম্নবৃত্তিয় নর-নারীর জীবনচর্যার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে নানান সংস্কার, আদিকল্প, বিশ্বাস। সেই সব অন্ধ অযৌক্তিক সংস্কার-বিশ্বাসে গড়ে উঠেছে অভিজিৎ সেনের অসংখ্য গল্পশিল্প। ‘জেহাঙ্গী’, ‘ডাইন’ পূর্বোক্ত গল্প ‘স্কিংকস্‌’, ‘ঋষির শ্রাদ্ধ’, ‘লখিন্দর ফিরে আসবে’, থেকে এমন অসংখ্য গল্পশিল্পে। পূর্বোক্ত ‘দেবাংশী’ গল্পে গল্পশিল্পী তাই লিখেছেন-

“সেই অবসন্ন ইন্দ্রিয়ে তার যা মনে আসত সে তাই করত। কোনটা লাগত কোনটা লাগত না। নিদান যদি ফলত, তার মাহাত্ম্যের কথা দশ-বিশ গ্রামে নতুন করে ছড়াতযদি না ফলত, মানুষ প্রার্থনাকারীর কোনো ত্রুটি খুঁজে বার করত। বিশ্বাস এমনই।”

‘ঋষির শ্রাদ্ধ’ গল্পে হাটখোলার কারখানা ঘরে বাদ্য যন্ত্র প্রস্তুত কারক ভীমের জীবন-জীবিকার সন্ধান মেলে। ঋষিদাসদের গোষ্ঠীপতি হল ঐ ভীম। তার একমাত্র পেশা চামড়ার খোল, ঢোলক, মাদল ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে সংসারের আর পাঁচ জনের মুখে অন্ন তুলে দেয়। ‘আমি’র আমিত্বে তথা, উত্তমপুরুষের জবানীতে এই গল্পে, নিচুতলার নর-নারীর জীবন বৃত্ত সম্পর্কে গল্পশিল্পী অভিজিৎ সেন তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারকে উপুড় করে দিয়েছেন। ‘ভীমঋষি’র গল্প এবং ‘নদীর মধ্যে মানুষ’ এই ভয় গল্পদ্বয়ও ‘আমি’র জবানীতে নিম্ন-বৃত্তীয় নর-নারীর জীবনবৃত্ত রূপায়িত হয়েছে। যেখানে নীচু তলাকার নর-নারীর জীবন বৃত্ত রূপায়িত হয়েছে। যেখানে নীচু তলাকার নর-নারীর জীবনভাষ্য মেথর পল্লীর বিনয়ের জাগ্রত প্রশ্ন চিহ্নে ফুটে উঠেছে। এই গল্পে উচ্চবর্ণ নিম্নবর্গকে যে আপন করে নিতে পারেনি; অথচ নিম্নবর্গীয় নারীর সঙ্গে অবাধে উচ্চবর্গীয় পুরুষ সমাজ লোকচক্ষু এড়িয়ে বিচরণ করতে পারে। এপ্রসঙ্গে চর্যাপদের সেই ‘ছোঁই ছোঁই যাহ সে ব্রাহ্মণ নেড়িয়া।’ চরণটি স্মরণ করিয়ে দেয়। বিনয়ের উপলব্ধি পথে তাই নিম্ন-বৃত্তীয় জীবনচর্যা সম্পর্কে উচ্চারিত হয় –

“তোমরা আমাকে অনেক আগেই ত্যাগ করেছ। আমি মেথর। আমি মল ভাণ্ডের পাশে বসে খেতে পারি। নির্বিঘ্নে  ঘুমাতে পারি কুকুরকে জড়িয়ে ধরে। স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া মারামারি করতে পারি। আমার স্ত্রী আমাকে ছেড়ে অন্য পুরুষের সঙ্গে চলে যেতে পারে। তোমাদের এটা শুধু পুরুষরাই পারে, যেমন আমার বাপ করেছিল। কিন্তু আমি তাকে ধরে এনে মেরে রক্তাক্ত করতে পারি এবং তার পরে মদ খেয়ে দুজনে হল্লা করতে পারি। এই সমস্ত কিছুর পরে দুজনে উন্মাদের মত যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হতে পারি।”

কেবল এই জাতপাত, কিম্বা, শ্রেণী বৈষম্যের অস্পৃশ্যতাই নয়। কৃষক জীবনের শাসন-শোষণের প্রত্যক্ষ ছবি, জমির হাতবদলের মর্মান্তিক সব কাহিনি অভিজিৎ সেনের অসংখ্য গল্পে উঠে এসেছে। নিম্নবৃত্তিয় সমাজে শাসন ও শোষণের আরও এক জোরালো হাতিয়ার গ্রাম্য রাজনৈতিক ক্ষমতার দম্ভ এবং আর্থিক শোষণ প্রক্রিয়ায় বিশেষ চাতুর্যতা অবলম্বন। ‘শিশুপাল’ গল্পের ঢিলা মণ্ডল সেই শোষিত নীচুতলার মানুষের প্রতিনিধি। ঢিলার শোষিত জীবনের নগ্ন ইতিহাস অত্যন্ত মর্মান্তিক ও বেদনাবহ লেখকের জীবন বীক্ষায় অর্থনৈতিক বৈষম্য, শ্রেণী শোষণের নক্কারজনক চিত্র দরদী ভরা লেখনীতে চিত্রিত। ‘নীল দর্পণ’ নাট্যচিত্রের মধ্য দিয়ে নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র যেমন গ্রামীণ কৃষক শ্রেণীর শোষণে নাভিশ্বাস হয়ে ওঠা হাহাকারময় ছবি শহুরে শিক্ষিত সমাজের কাছে তুলে ধরে ছিলেন; ঠিক তেমনি ভাবে গল্পকার অভিজিৎ সেন গ্রাম জীবনের নীচু তলাকার নর-নারীর শোষণ-বঞ্চনা, জমির উচ্ছেদের অসহায়তা, ভূমি দখল নিয়ে পরস্পরের রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা, মালিক, মহাজন, উকিল, মোক্তারের দ্বারা শোষিত হওয়ার জ্বলন্ত সব ছবি – এক কথায় নীচুতলার মানুষের চির অসহায়তার চিত্রকে শহুরে শিক্ষিত সমাজের কাছে তুলে ধরেছেন। আধুনিক কথাশিল্পী অনিল ঘড়াই তাঁর গল্প বিশ্বে অন্ত্যজ শ্রেণীর শোষণের যে রাজনৈতিক দৃশ্য তাঁর ‘ভোটবুড়া’, ‘জলচুরুণী’, ‘কাকমারা’, ‘বীজ’, ‘জলস্রোত’ কিম্বা পারানি-জোবনি চরিত্রের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলেন। তেমনি অভিজিৎ সেন ঢিলা মণ্ডলের জীবন ইতিহাসের পাতায় শোষণ আর এক আকাশ হতাশার কালমেঘ জমাট বাঁধতে দেখে, দেউনিয়া দানী সিংহ রায়ের চোখ দিয়ে দিব্যদৃষ্টিতে দেখেন –

“রাম শ্যামকে ঠকায়, আবার যদুর কাছে ঠকে রাম। শুধু বেঁচে থাকার ধান্দায় রাম, শ্যাম, যদু পরস্পরকে ঠকিয়ে যাবে, অথবা ঠকাবার চেষ্টা করবে। চোখের সামনে উচ্চতর কোন লক্ষ্য তো নেই। এ যেন রিক্সাওয়ালাদের সন্ধ্যাবেলার জুয়া খেলা। সারাদিনে সবাই তো একই রকম রোজগার করেছে। সন্ধ্যাবেলায় সেই একই রোজগার একের কাছ থেকে অন্যের কেড়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা।”

এভাবে নীচুতলার নর-নারীর জঠর যুদ্ধের লড়াই গল্পশিল্পী অভিজিৎ সেন মার্কসীয় দৃষ্টিতে সমাজতাত্ত্বিকের বিচার-বিশ্লেষণ পদ্ধতির দ্বারা এঁকেছেন। ‘ব্রাহ্মণ্য’ গল্পে ভূমি সংস্কারের প্রসঙ্গ ক্রমে নীচুতলার মানুষের সংস্কার বিশ্বাসের ছবি প্রতিফলিত হয়েছে। মেদিনীপুরের শিক্ষক সম্মেলনের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে গিয়ে গল্প কথকের সঙ্গে হাওড়া স্টেশনে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময়কার দুই সহপাঠী অশোক ও অনিমা। এখন তারা দাম্পত্য বন্ধনে আবদ্ধ। এই দুই দম্পতির সূত্র ধরে গল্পের সূত্রে গল্প উঠে আসে। উত্তমপুরুষের জবানীতে উঠে আসে কমল সাধুর প্রসঙ্গ। গল্পের নাম ‘লখীন্দর ফিরে আসবে’। সমগ্র গল্পটি অতিপ্রাকৃতের আবহে গড়ে উঠেছে। অভিজিৎ সেন নীচু তলার নর-নারীর জীবন বৃত্ত অঙ্কনের পাশাপাশি, চরিত্রদের মনো বিশ্লেষণে কতখানি দক্ষ গল্পকুশলী শিল্পী, এই গল্পের গঠন বিন্যাস তারই উজ্জ্বল স্বাক্ষর। এই গল্প পাঠে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ গল্পের পটভূমিটি।

       নীচুতলার নর-নারীরা যে নানান অশিক্ষা-কুশিক্ষার অন্ধকারে তলিয়ে গিয়ে অকালে হারিয়ে যায় পৃথিবীর মানচিত্র থেকে; তারও মর্মান্তিক ছবি ‘জেহাঙ্গী’ গল্পে লক্ষ্য করার মতো। ডাইনী বিশ্বাস, ডাইনী সংস্কার নিয়ে এযাবৎ ভগীরথ মিশ্র, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, অনিল ঘড়াই থেকে মহাশ্বেতা দেবীদের লেখনীতে ঐ নিম্ন-বৃত্তীয় জীবন চিত্রণে বার বার বহুভাবে উঠে এসেছে। অভিজিৎ সেনও সেই অন্তেবাসী নর-নারীর যাপন সংকটের চিত্র অঙ্কনে তার ব্যতিক্রম নন। সাঁওতাল গৃহবধু জেহাঙ্গীকে ডাইন সন্দেহে বার বার টাঙ্গি দিয়ে আঘাত করে তার ভাশুরের ছেলে, সন্তান সম রেংটা। নিম্নবৃত্তিয় সাঁওতাল সমাজের বুকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা নানান অলৌকিক সংস্কার, বিশ্বাস তুকতাক, ঝাড়ফুঁক, যাদু, তন্ত্র-মন্ত্র যা গল্প শিল্পী অভিজিৎ সেন লোকায়ত জীবনের অনুষঙ্গেই তুলে ধরেছেন। তাঁর ‘ডাইন’ গল্পেও ঐ সমস্যা-সংকটের কথা আরও সজীব রূপে চিত্রিত। পূর্বোক্ত ‘স্কিংকস্‌’ গল্পে উঠে এসেছে ঐ তেলপড়া, জলপড়া, বশীকরণ মন্ত্রের মতো নানান সংস্কার-বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি। সমাজের বুকে জাতির নামে বজ্জাতির ছবি আজাও লক্ষ্য করা যায়। বিশেষত: নিম্নবৃত্তিয় সমাজের মধ্যে এই জাত্যভিমান তাদের অশিক্ষার অজ্ঞতা থেকেই আজও জাঁকিয়ে বসে রয়েছে ঐ শ্রেণির নর-নারীর মধ্যে। হিন্দু-মুসলিম সেই জাত্যভিমানের চিত্র গল্পকারের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তথা, সমবায় ব্যাঙ্কের কর্মসূত্রে বাসে করে যাতায়াত কালে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে ঘটেছে। যার ফলে তাঁকে লিখতে বাধ্য করে ‘কলাপাতা’ নামের ক্ষুদ্র জাতিগত সংস্কারের ইতিবৃত্তের গল্প চিত্রটি।

       এভাবে বাংলা ছোটগল্পের ধারায় অভিজিৎ সেন সমাজের একেবারে নীচের তলাকার মানুষের জীবন-সংকটের, যাপন সমস্যার জটিল-কঠিন লড়াকু ছবি তুলে ধরলেন। শহুরে নাগরিক শিক্ষিত তথা, উচ্চবিত্তদের দাম্পত্য সমস্যা-সংকটের ছবি যখন বাংলা সাহিত্যের পাতায় বৈচিত্র্যহীনভাবে ভরে উঠেছিল। উচ্চবিত্তদের ভোগবিলাস আর বেডসিনের নগ্ন চিত্র থেকে সম্পূর্ণ  সরে এসে গল্পশিল্পী অভিজিৎ সেন সমাজের একেবারে নীচের তলার শ্রেণিহীন শোষিত নর-নারীর বঞ্চিত জীবনের ইতিবৃত্তকে তাঁর গল্প শিল্পের বিষয়বস্তু করে তুললেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আঞ্চলিক জীবন ভাষ্য রূপে দলিত সাহিত্যের ধারাটি আরো পরিপুষ্ট লাভ করলো, অভিজিৎ সেনের নীচুতলার মানুষের জীবন ধারার বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পরিপ্রেক্ষিতে। উত্তরবঙ্গের গ্রামীণ পটভূমি তাঁর গল্প শিল্পে ঘিরে থাকলেও কোনো আঞ্চলিকতার সীমানায় সাহিত্যকে বেঁধে রাখা যায় না। উত্তরবঙ্গের মাটি-শেকড়, নদ-নদী তথা মহানন্দা, ফুলহর, কুলিক, নাগর, টাঙ্গন, পুনর্ভবা, আনাই, কালিন্দ্রী প্রভৃতি নদীমাতৃক অঞ্চলও সেই নদী তীরবর্তী গোটা কৌম জনজীবনের জল ছবিকে শিল্পী অভিজিৎ সেন তাঁর অপার সমবেদনার তুলি দিয়ে ফুটিয়ে তুললেন। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন, বীরভূম-লাভপুরের লালমৃত্তিকা স্পর্শী মানুষের জীবনভাষ্য হয়ে উঠেছেন; অদ্বৈত মল্লবর্মণ যেমন তিতাস নদী তীরবর্তী মালো সম্প্রদায়ের জীবন ভাষ্যকার; আবার মহাশ্বেতা দেবীও শবর, সাঁওতাল শ্রেণির জীবন ভাষ্যকার রূপে হয়ে উঠেছেন ‘লোধা মাতা’ ও ‘শবর জননী’, তেমনি চলমান দলিত জীবনের কথন চিত্র নির্মাণে অনিল ঘড়াই, গুণময় মান্না, নলিনী বেরা সহ এক ঝাঁক কথা শিল্পী দলিত সাহিত্যকে যেভাবে সমৃদ্ধতর করে তুলেছেন; সেই ধারা পথে গল্পশিল্পী অভিজিৎ সেন উত্তরবঙ্গের নীচুতলার মানুষের জীবনভাষ্যকার রূপে চেনা জগতের ছবির মাঝে, অনেক অজানা-অচেনা জগতের সন্ধান দিয়েছেন তাঁর গল্প শিল্পে। নীচু তলাকার মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় গল্প শিল্পীর মন বেদনাহত। সেই সব হতদরিদ্র গ্রাম সমাজের নর-নারীর দুঃখ-লাঞ্ছনায় গল্পকার অভিজিৎ সেন ডুব দিতে চেয়েছেন সমস্যার শেকড়ে। নীচুতলার মানুষদের জীবনভাষ্যকার হয়ে উঠে শিক্ষিত উচ্চবিত্তদের সম্মুখে তাঁর গল্প-কাহিনি তুলে ধরে মানবিকতার লজ্জাকে চোখে আঙুল দিয়ে যেন দেখিয়ে দিতে চেয়েছেন। কি উত্তরবঙ্গ, কি দক্ষিণবঙ্গ – গোটা কৌমজ জনজীবনর শোষণ-বঞ্চনার ইতিবৃত্তে উঠে আসা ছবিতে যেন কবির সেই ক্ষুব্ধ আর্তরোল উচ্চারণ হতে চায় –

“শতাব্দী লাঞ্ছিত আর্তের কান্না

      প্রতি নিঃশ্বাসে আনে লজ্জা,...”

 

তথ্যসূত্র:

১। নিম্নবর্গের ইতিহাস – সম্পাদনা: গৌতম ভদ্র ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা. লি., কলকাতা – ০৯, অষ্টম মুদ্রণ : ২০১৫, পৃ. – ২৭।

২। পঞ্চাশটি গল্প – অভিজিৎ সেন, সুবর্ণরেখা, কলিকাতা – ০৯, প্রথম সংস্করণ : ২০০০, ভূমিকা অংশ।

৩। তদেব, পৃ. – ১১০।

৪। তদেব, পৃ. – ১১৯।

৫। তদেব, পৃ. – ৩৪৩।

৬। বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত – ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মডার্ণ বুক এজেন্সী প্রা. লি., কলকাতা – ৭৩, পুনর্মুদ্রণ : ২০১৯-২০২০, পৃ. – ৬১৬।